ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে তিন নারী সামরিক কর্মকর্তার নাম আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। এরা হলেন পাকিস্তানের ফাইটার পাইলট আয়েশা ফারুক, ভারতের কর্নেল সোফিয়া কুরশি এবং উইং কমান্ডার ভূমিকা সিং। তাদের ব্যতিক্রমী অবদান, সাহস ও নেতৃত্ব নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত হচ্ছে, যা নারী-পুরুষের সামর্থ্য এবং লিঙ্গ-বৈচিত্র্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
আয়েশা ফারুক: পাকিস্তানের প্রথম নারী ফাইটার পাইলট হিসেবে ২০১৩ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েই আয়েশা নিজেদের ইতিহাসে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতে, তার পাল্টা অভিযান এবং ভারতের আধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনায় তিনি জাতীয় নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার কৃতিত্ব পাকিস্তানে নারী অংশগ্রহণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে তার প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
কর্নেল সোফিয়া কুরশি: ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩৫ বছর বয়েসী কর্নেল সোফিয়া কুরশি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও বহুজাতিক সামরিক অনুশীলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সুপরিচিত। তিনি ভারতের “অপারেশন সিন্দুর”-এ শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা প্যাহেলগাম-এ সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যুত্তরে চালানো হয়। এ অভিযানে তার উপস্থিতি ও নেতৃত্ব নারীদের কার্যকর সামরিক ভূমিকার স্বীকৃতি ঘটায়। তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে অপারেশনের যৌক্তিকতা ও সামরিক কৌশল তুলে ধরে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কারণ ব্যাখ্যা করেন।
উইং কমান্ডার ভূমিকা সিং: ভারতীয় বিমানবাহিনীতে ভূমিকা সিং-এর ভূমিকা ইতিমধ্যে বিশেষ সম্মান পেয়েছে। তার পরিবার সামরিক ঐতিহ্যবাহী—তার দাদা ও স্বামী দু’জনেই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি তাঁর দক্ষতা ও দৃঢ়তায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর আধুনিক চিত্ত-মনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
অপারেশন সিন্দুর ও সামাজিক প্রতীকী ব্যাখ্যা: ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের নাম “সিন্দুর” রাখা হয়েছে, যা বিবাহিত হিন্দু নারীর মাথার অংশে ব্যবহৃত হয় এবং স্বামীর জীবনের প্রতীক৷ সন্ত্রাস ও যুদ্ধজনিত বিপর্যয়ে নারীদের বৈধব্য, শোক ও সংগ্রামের ইঙ্গিত তুলে ধরতে অপারেশনের এই নামকরণ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের গভীর প্রভাব: সোফিয়া কুরশি (একজন মুসলিম) ও ভূমিকা সিং (একজন শিখ)-এর প্রতিনিধিত্ব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির প্রতিফলন। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের পক্ষ থেকে এতে নারীরা ও সংখ্যালঘুরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের উপস্থিতি নারী-পুরুষ বৈচিত্র্যকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরছে এবং বাধাবিঘ্নের মাঝেও শক্তি, সাহস ও নেতৃত্বের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
পরিশেষে, আয়েশা ফারুক, সোফিয়া কুরশি ও ভূমিকা সিং-এর উদাহরণ ভারত-পাকিস্তান সংকটে নারীদের সামরিক নেতৃত্ব, কৌশল, ও মনস্তাত্ত্বিক শক্তির গুরুত্বকে আলোকিত করেছে—যা শুধু সামরিক ক্ষেত্রে নয়, সর্বস্তরে লিঙ্গ-সমতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে।