সুরা ইয়া-সীন

৫. ১-১২ নং আয়াতের বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা

সূরা ইয়াসিনের প্রথম অংশ কুরআনের ঐশ্বরিক উৎসের প্রমাণ দেয়, নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মিশনকে নিশ্চিত করে।

“”””””এবং এটি পথনির্দেশনা এবং বিপথগামিতার মৌলিক সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করে। আসুন আমরা এই আয়াতগুলো বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করি:

১-৪ নম্বর আয়াত: ঐশ্বরিক শপথ এবং নবুওয়তের স্বীকৃতি

১ নম্বর আয়াত:
﴿يس﴾

অনুবাদ: “ইয়া সিন”

ব্যাখ্যা: সূরাটি “ইয়া সিন” অক্ষরগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে, যা ২৯টি সূরার শুরুতে পাওয়া রহস্যময় অক্ষরগুলোর (হুরুফ মুকাত্তাত) মধ্যে অন্যতম। পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, এই অক্ষরগুলোর বিভিন্ন ব্যাখ্যা পণ্ডিতদের রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন এগুলো একটি ঐশ্বরিক কোড, যার অর্থ কেবল আল্লাহই জানেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন এগুলো নবী (সা.)-এর প্রতি সম্বোধন, যেখানে “ইয়া সিন” সম্ভবত “হে মানব” অর্থ বহন করে অথবা মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্য সম্মানসূচক উপাধি হিসাবে কাজ করে।

২-৪ নম্বর আয়াত:

﴿وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ . إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ . عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾

অনুবাদ: “প্রজ্ঞাপূর্ণ কুরআনের কসম। নিশ্চয়ই আপনি (হে মুহাম্মদ) প্রেরিত রসূলগণের একজন, সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত।”

ব্যাখ্যা: এই আয়াতগুলোতে কুরআনের কসম রয়েছে, যাকে “প্রজ্ঞাপূর্ণ” (আল-হাকিম) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা এর নিখুঁত প্রজ্ঞা এবং ত্রুটিহীন পথনির্দেশনার উপর জোর দেয়। এই কসমের পরে, আল্লাহ সরাসরি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্বোধন করেছেন, তাঁর একজন প্রকৃত রসূল হিসাবে মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছেন। মক্কার প্রেক্ষাপটে এই স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেখানে তাঁর নবুওয়তকে অস্বীকার করা হচ্ছিল। “সরল পথ” সত্য ও একেশ্বরবাদের ধর্মকে বোঝায়, যা ইঙ্গিত করে যে নবীর বার্তা ঐশ্বরিক নির্দেশের সাথে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গতিপূর্ণ।

ঐশ্বরিক শপথ এবং মুহাম্মদের রিসালাতের সরাসরি স্বীকৃতির সংমিশ্রণ সূরার শুরু থেকেই প্রত্যাদেশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে, যা পরবর্তী যুক্তির ভিত্তি স্থাপন করে।

৫-৬ নম্বর আয়াত: প্রত্যাদেশের উদ্দেশ্য

৫-৬ নম্বর আয়াত:

﴿ تَنزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ . لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ ﴾

অনুবাদ: “[এটি] পরাক্রমশালী, দয়াময়ের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পিতৃপুরুষদের সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা উদাসীন।”

ব্যাখ্যা: এই আয়াতগুলোতে কুরআনের উৎস আল্লাহকে চিহ্নিত করা হয়েছে, দুটি ঐশ্বরিক গুণাবলীর মাধ্যমে: “আল-আজিজ” (মহাপরাক্রমশালী), যা তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উপর জোর দেয় এবং “আর-রহীম” (দয়াময়), যা তাঁর করুণার উপর আলোকপাত করে। গুণাবলীর এই জুড়ি তাৎপর্যপূর্ণ, যা দেখায় যে প্রত্যাদেশ ঐশ্বরিক ক্ষমতা এবং করুণা উভয় থেকেই উৎসারিত।

মুহাম্মদের মিশনের উদ্দেশ্য তখন নির্দিষ্ট করা হয়েছে: এমন লোকদের সতর্ক করা যারা পূর্বের কোনো সতর্কবার্তা পায়নি, কারণ:

১. তারা দীর্ঘকাল ধরে কোনো রসূলবিহীন ছিল (ঈসা ও মুহাম্মদের মধ্যবর্তী “ফাতরাহ” সময়কাল)।

২. তাদের পূর্বপুরুষরা সতর্কবার্তা পেয়েছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা ভুলে গিয়েছিল।

“ফলে তারা উদাসীন” (ফাহুম গাফিলুন) এই শব্দগুচ্ছটি মক্কার সমাজের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অসচেতনতাকে বর্ণনা করে, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের লক্ষণে পরিবেষ্টিত হওয়া সত্ত্বেও ঐশ্বরিক সত্য সম্পর্কে উদাসীন ছিল। “গাফলাহ”-এর (উদাসীনতা) এই অবস্থাকে নতুন রসূল প্রেরণের ন্যায্যতা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

৭-৯ নম্বর আয়াত: প্রত্যাখ্যানের পরিণতি

৭-৯ নম্বর আয়াত:

﴿ لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَى أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ . إِنَّا جَعَلْنَا فِي أَعْنَاقِهِمْ أَغْلَالًا فَهِيَ إِلَى الْأَذْقَانِ فَهُم مُّقْمَحُونَ . وَجَعَلْنَا مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ ﴾

অনুবাদ: “তাদের অনেকের সম্পর্কেই এই কথা সত্য হয়েছে যে, তারা বিশ্বাস করবে না। আমি তাদের গর্দানে চিবুক পর্যন্ত বেড়ি লাগিয়েছি। ফলে তাদের মস্তক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আছে। আমি তাদের সামনে প্রাচীর স্থাপন করেছি এবং তাদের পেছনেও প্রাচীর স্থাপন করেছি, অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি। ফলে তারা দেখতে পায় না।”

ব্যাখ্যা: এই আয়াতগুলোতে সত্যকে ক্রমাগত প্রত্যাখ্যানকারীদের সম্পর্কিত একটি আধ্যাত্মিক বাস্তবতা বর্ণনা করা হয়েছে। “তাদের অনেকের সম্পর্কেই এই কথা সত্য হয়েছে যে” এই বাক্যটি আল্লাহর সেই আদেশের কথা উল্লেখ করে, যারা একগুঁয়েমিভাবে পথনির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে প্রমাণ উপস্থাপন করা সত্ত্বেও তারা বিশ্বাস করবে না। চিবুক পর্যন্ত পৌঁছানো শিকলের চিত্র বর্ণনা করে যে কীভাবে সত্যের প্রত্যাখ্যান একটি স্ব-আরোপিত কারাগারে পরিণত হয়, যা ব্যক্তির পক্ষে পথনির্দেশনার দিকে ফিরে যাওয়া ক্রমশ কঠিন করে তোলে।”””তাদের সামনে এবং পিছনে স্থাপন করা বাধাগুলি তাদের অতীতের শিক্ষা থেকে শিখতে বা ভবিষ্যতের পরিণতি অনুমান করতে অক্ষমতাকে উপস্থাপন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Shopping Cart